12:56 am, Tuesday, 17 September 2024

গড়ে তুলেছেন অবৈধ সম্পদের পাহাড়  সাবেক গণপূর্তমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ। গণপূর্তের নির্বাহী প্রকৌশলী আমানুল্লাহ সরকার

প্রতিনিধির নাম

 

নিজস্ব প্রতিবেদক

পতিত ফ্যাসিবাদি সরকারের সাবেক গণপূর্তমন্ত্রী র. আ. ম. উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরীর নিজ এলাকা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার লোক হওয়ার সুবাদে এবং মন্ত্রীর কাছের লোক হওয়ার কারনে প্রায় সবকিছুরই একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ ছিল মহাখালী গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আমানুল্লাহ সরকারের হাতে। তার দাপটে রীতিমত কোনঠাসা হয়ে পড়েছিলেন অন্যান্য কর্মকর্তারা।

 

সে সময় মন্ত্রীর পক্ষে সবধরনের বদলী ও টেন্ডার বানিজ্য-সহ সব কিছুতেই আমানুল্লাহ সরকারের সাথে পরামর্শ করেই করতেন ভন্ডপীরখ্যাত আওয়ামী ওলামালীগের নেতা শামীম আখতার।

 

আমানুল্লাহকে তিনি এতই পছন্দ করতেন যে তাকে নিজের আরও কাছে রাখতে ঢাকা গণপুর্ত বিভাগ ৪-এ পোস্টিং দিবেন বলে প্রতিশ্রুতি দেন। সে মোতাবেক আমানুল্লাহ ও শামীম আখতার গং ছক আটেন। ১৪ জুলাই ২০২৪ তারিখে ৮৯১ ও ৮৯৩ দুটি আলাদা বদলি আদেশে ৫ জন নির্বাহী প্রকৌশলীর ঢাকার মধ্যেই দফতর বদল হয়। এই পাঁচটি বদলীতে শামীম আখতার, ওবায়দুল মোক্তাদির মিলে ২৫ কোটি টাকার লেনদেন করেন। এই টাকার অর্ধেক চলে যায় প্রধান প্রকৌশলীর ক্যাশিয়ারখ্যাত কিংডম বিল্ডার্সের মালিক নুসরাত হোসেন (যিনি সদ্য দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব শাহ কামালের সাথে অবৈধ অর্থ উদ্ধার অভিযানে গ্রেফতার হয়েছেন)-এর মহাখালীর ডিওএইচএস-এর বাসায়। বাকি টাকার ১০ কোটি ওবায়দুল মোক্তাদিরের বাসায় আমানুল্লাহ নিজে পৌছে দেন। অবশিষ্ট টাকা অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী শহিদুল আলম নেন।

 

কিন্তু শামীম আক্তার কৌশলে আমানুল্লাহ কে শেরে বাংলা নগর ২ এ বদলী করে, তার নিজের একান্ত অনুগত ভৃত্য মাসুদ রানা কে ঢাকা গণপুর্ত বিভাগ ৪ এ বসিয়ে দেন। এতে সাবেক মন্ত্রী ওবায়দুল মোক্তাদির এতই রুষ্ট হন যে , ১৫/০৭/২০২৪ তারিখে ৯০৪ নম্বর স্মারকে আমানুল্লাহর বদলীর ৮৯৩ স্মারকের আদেশটি বাতিল করতে বাধ্য হন।

 

 

৩১ ব্যাচের এই কর্মকর্তা বুয়েট ছাত্রলীগের নেতা ছিলেন। ফলে আইইবিতে বঙ্গবন্ধু প্রকৌশল পরিষদের নেতাদের সুপারিশে প্রথমেই ঢাকায় সহকারী প্রকৌশলীর পোস্টিং পান। আইইবি তে আওয়ামী ভোট ডাকাতির জনক কবির আহমেদ ভূইয়ার আশীর্বাদে পরবর্তীতে তিনি একাদিক্রমে রক্ষনাবেক্ষন ৩ ও রক্ষণাবেক্ষন ২ উপবিভাগে চাকুরি করেন। এরপর তিনি নগর গণপূর্ত উপবিভাগে পোস্টিং বাগিয়ে নেন। সেখানে তিনি স্মরণকালের সবচেয়ে বড় মাফিয়া, সিটি ডিভিশনের তৎকালীন নির্বাহী প্রকৌশলী শওকত উল্লাহর আস্থাভাজন হয়ে উঠেন। উল্লেখ্য শওকত উল্লাহ টানা ৯ বছর সিটি ডিভিশনে থেকে বদলী বানিজ্যের একচ্ছত্র আধিপত্য করে শত শত কোটি টাকা কামিয়ে উপসচিব হয়ে বিদায় নিয়েছেন। শওকত উল্লাহ ২০২৪-এ ডামি নির্বাচনের অর্থ প্রতিমন্ত্রীর পিএস ছিলেন এবং বর্তমানে পলাতক রয়েছেন। নির্বাহী প্রকৌশলী হিসাবে পদোন্নতি পাওয়ামাত্র ঢাকা গণপূর্ত বিভাগ ২ এর মতো জায়গায় পোস্টিং বাগিয়ে নেন। কথিত আছে এজন্য নাকি শ ম রেজাউল করিমের সাথে তার ৫ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে। আর তখনকার প্রধান প্রকৌশলী শাহাদাতকে ২ কোটি টাকা ও পাঁচ তারকা হোটেলে এক নায়িকা নিয়ে রাত কাটানোর ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন তিনি।

 

আমানুল্লাহ সরকার মিরপুরে সাড়ে এগার হাজার কোটি টাকার টেন্ডার বাণিজ্য করে ৪০০ কোটি টাকা কামিয়ে নেন। তার পার্সেন্টেজ বানিজ্য, নিজে বেনামে ঠিকাদারী এসব কারও অজানা নয়। মিরপুর থেকে ৫০০ কোটি টাকা কামিয়ে তিনি মহাখালী গণপূর্ত বিভাগে যান। গুলশানে তিনি ২৯৫০ বর্গফুটের ফ্ল্যাট কিনেছেন। ক্ষমতাধর ব্যক্তিদের মদ ও নারী সাপ্লাইয়ে সুনাম রয়েছে তার। মহাখালীতে চাকুরী করার সুবাদে ২ বার হজও করেছেন। টাকার জোরে ক্ষমতাধর ব্যক্তিদের স্নেহধন্য হওয়ায় বর্তমানে শামীম আখতার তাকে নিয়ে, দরবেশ খ্যাত সাবেক বেসরকারি বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের স্বপ্নের প্রকল্প করাইল বস্তিতে আবাসন প্রকল্প করে হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার ধান্দায় রয়েছেন। এভাবেই একের পর এক ঢাকায় ভালো ভালো পোস্টিং বাগিয়ে নিয়েছেন ফ্যাসিবাদের এই দোসর, ১৩ বছরের চাকুরি জীবনে একটি দিনও ঢাকার বাইরে যাননি তিনি, হয়েছেন শত শত কোটি টাকার মালিক। দেশে এবং দেশের বাইরে গড়ে তুলেছেন অেবৈধ সম্পদের পাহাড়।

 

সাবেক যুবলীগ নেতা কাউছার মোল্লার ভাগিনা, আওয়ামী হেলমেট বাহিনীর শুটার হাসান মোল্লার ‘মা বা কন্সট্রাকশন’ কে তিনি কোটি কোটি টাকার কাজ দিয়েছেন এবং উত্তরা থানার কাজও তিনি হাসান মোল্লাকে দিয়েছিলেন।

 

সূত্র জানায়, ছাত্র-জনতার আন্দোলনকে দমন করতে আওয়ামী সন্ত্রাসীদের মাঠে নামাতে এবং তাদের হাতে অস্ত্র তুলে দিতে প্রচুর অর্থ ঢেলেছেন এই প্রকৌশলী। বলা যায় শত শত ছাত্র-জনতা হত্যায় ইন্ধনদাতা ও সস্ত্রাসীদের বিনিয়োগকারী হিসেবে রক্তের দাগ লেগে আছে আছে তার হাতে।

 

আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পরও আশ্চর্য এক যাদুর কাঠির বদৌলতে এখনো তিনি দাপটের সঙ্গে আগের পদে থেকেই চালিয়ে যাচ্ছেন সকল অবৈধ কর্মকাণ্ড।

 

 

 

ট্যাগস :

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপডেট সময় : 03:44:37 pm, Monday, 26 August 2024
37 বার পড়া হয়েছে
error: Content is protected !!

গড়ে তুলেছেন অবৈধ সম্পদের পাহাড়  সাবেক গণপূর্তমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ। গণপূর্তের নির্বাহী প্রকৌশলী আমানুল্লাহ সরকার

আপডেট সময় : 03:44:37 pm, Monday, 26 August 2024

 

নিজস্ব প্রতিবেদক

পতিত ফ্যাসিবাদি সরকারের সাবেক গণপূর্তমন্ত্রী র. আ. ম. উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরীর নিজ এলাকা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার লোক হওয়ার সুবাদে এবং মন্ত্রীর কাছের লোক হওয়ার কারনে প্রায় সবকিছুরই একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ ছিল মহাখালী গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আমানুল্লাহ সরকারের হাতে। তার দাপটে রীতিমত কোনঠাসা হয়ে পড়েছিলেন অন্যান্য কর্মকর্তারা।

 

সে সময় মন্ত্রীর পক্ষে সবধরনের বদলী ও টেন্ডার বানিজ্য-সহ সব কিছুতেই আমানুল্লাহ সরকারের সাথে পরামর্শ করেই করতেন ভন্ডপীরখ্যাত আওয়ামী ওলামালীগের নেতা শামীম আখতার।

 

আমানুল্লাহকে তিনি এতই পছন্দ করতেন যে তাকে নিজের আরও কাছে রাখতে ঢাকা গণপুর্ত বিভাগ ৪-এ পোস্টিং দিবেন বলে প্রতিশ্রুতি দেন। সে মোতাবেক আমানুল্লাহ ও শামীম আখতার গং ছক আটেন। ১৪ জুলাই ২০২৪ তারিখে ৮৯১ ও ৮৯৩ দুটি আলাদা বদলি আদেশে ৫ জন নির্বাহী প্রকৌশলীর ঢাকার মধ্যেই দফতর বদল হয়। এই পাঁচটি বদলীতে শামীম আখতার, ওবায়দুল মোক্তাদির মিলে ২৫ কোটি টাকার লেনদেন করেন। এই টাকার অর্ধেক চলে যায় প্রধান প্রকৌশলীর ক্যাশিয়ারখ্যাত কিংডম বিল্ডার্সের মালিক নুসরাত হোসেন (যিনি সদ্য দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব শাহ কামালের সাথে অবৈধ অর্থ উদ্ধার অভিযানে গ্রেফতার হয়েছেন)-এর মহাখালীর ডিওএইচএস-এর বাসায়। বাকি টাকার ১০ কোটি ওবায়দুল মোক্তাদিরের বাসায় আমানুল্লাহ নিজে পৌছে দেন। অবশিষ্ট টাকা অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী শহিদুল আলম নেন।

 

কিন্তু শামীম আক্তার কৌশলে আমানুল্লাহ কে শেরে বাংলা নগর ২ এ বদলী করে, তার নিজের একান্ত অনুগত ভৃত্য মাসুদ রানা কে ঢাকা গণপুর্ত বিভাগ ৪ এ বসিয়ে দেন। এতে সাবেক মন্ত্রী ওবায়দুল মোক্তাদির এতই রুষ্ট হন যে , ১৫/০৭/২০২৪ তারিখে ৯০৪ নম্বর স্মারকে আমানুল্লাহর বদলীর ৮৯৩ স্মারকের আদেশটি বাতিল করতে বাধ্য হন।

 

 

৩১ ব্যাচের এই কর্মকর্তা বুয়েট ছাত্রলীগের নেতা ছিলেন। ফলে আইইবিতে বঙ্গবন্ধু প্রকৌশল পরিষদের নেতাদের সুপারিশে প্রথমেই ঢাকায় সহকারী প্রকৌশলীর পোস্টিং পান। আইইবি তে আওয়ামী ভোট ডাকাতির জনক কবির আহমেদ ভূইয়ার আশীর্বাদে পরবর্তীতে তিনি একাদিক্রমে রক্ষনাবেক্ষন ৩ ও রক্ষণাবেক্ষন ২ উপবিভাগে চাকুরি করেন। এরপর তিনি নগর গণপূর্ত উপবিভাগে পোস্টিং বাগিয়ে নেন। সেখানে তিনি স্মরণকালের সবচেয়ে বড় মাফিয়া, সিটি ডিভিশনের তৎকালীন নির্বাহী প্রকৌশলী শওকত উল্লাহর আস্থাভাজন হয়ে উঠেন। উল্লেখ্য শওকত উল্লাহ টানা ৯ বছর সিটি ডিভিশনে থেকে বদলী বানিজ্যের একচ্ছত্র আধিপত্য করে শত শত কোটি টাকা কামিয়ে উপসচিব হয়ে বিদায় নিয়েছেন। শওকত উল্লাহ ২০২৪-এ ডামি নির্বাচনের অর্থ প্রতিমন্ত্রীর পিএস ছিলেন এবং বর্তমানে পলাতক রয়েছেন। নির্বাহী প্রকৌশলী হিসাবে পদোন্নতি পাওয়ামাত্র ঢাকা গণপূর্ত বিভাগ ২ এর মতো জায়গায় পোস্টিং বাগিয়ে নেন। কথিত আছে এজন্য নাকি শ ম রেজাউল করিমের সাথে তার ৫ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে। আর তখনকার প্রধান প্রকৌশলী শাহাদাতকে ২ কোটি টাকা ও পাঁচ তারকা হোটেলে এক নায়িকা নিয়ে রাত কাটানোর ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন তিনি।

 

আমানুল্লাহ সরকার মিরপুরে সাড়ে এগার হাজার কোটি টাকার টেন্ডার বাণিজ্য করে ৪০০ কোটি টাকা কামিয়ে নেন। তার পার্সেন্টেজ বানিজ্য, নিজে বেনামে ঠিকাদারী এসব কারও অজানা নয়। মিরপুর থেকে ৫০০ কোটি টাকা কামিয়ে তিনি মহাখালী গণপূর্ত বিভাগে যান। গুলশানে তিনি ২৯৫০ বর্গফুটের ফ্ল্যাট কিনেছেন। ক্ষমতাধর ব্যক্তিদের মদ ও নারী সাপ্লাইয়ে সুনাম রয়েছে তার। মহাখালীতে চাকুরী করার সুবাদে ২ বার হজও করেছেন। টাকার জোরে ক্ষমতাধর ব্যক্তিদের স্নেহধন্য হওয়ায় বর্তমানে শামীম আখতার তাকে নিয়ে, দরবেশ খ্যাত সাবেক বেসরকারি বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের স্বপ্নের প্রকল্প করাইল বস্তিতে আবাসন প্রকল্প করে হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার ধান্দায় রয়েছেন। এভাবেই একের পর এক ঢাকায় ভালো ভালো পোস্টিং বাগিয়ে নিয়েছেন ফ্যাসিবাদের এই দোসর, ১৩ বছরের চাকুরি জীবনে একটি দিনও ঢাকার বাইরে যাননি তিনি, হয়েছেন শত শত কোটি টাকার মালিক। দেশে এবং দেশের বাইরে গড়ে তুলেছেন অেবৈধ সম্পদের পাহাড়।

 

সাবেক যুবলীগ নেতা কাউছার মোল্লার ভাগিনা, আওয়ামী হেলমেট বাহিনীর শুটার হাসান মোল্লার ‘মা বা কন্সট্রাকশন’ কে তিনি কোটি কোটি টাকার কাজ দিয়েছেন এবং উত্তরা থানার কাজও তিনি হাসান মোল্লাকে দিয়েছিলেন।

 

সূত্র জানায়, ছাত্র-জনতার আন্দোলনকে দমন করতে আওয়ামী সন্ত্রাসীদের মাঠে নামাতে এবং তাদের হাতে অস্ত্র তুলে দিতে প্রচুর অর্থ ঢেলেছেন এই প্রকৌশলী। বলা যায় শত শত ছাত্র-জনতা হত্যায় ইন্ধনদাতা ও সস্ত্রাসীদের বিনিয়োগকারী হিসেবে রক্তের দাগ লেগে আছে আছে তার হাতে।

 

আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পরও আশ্চর্য এক যাদুর কাঠির বদৌলতে এখনো তিনি দাপটের সঙ্গে আগের পদে থেকেই চালিয়ে যাচ্ছেন সকল অবৈধ কর্মকাণ্ড।