পঞ্চগড়ে পর্যটক হয়রানি’কে কেন্দ্র করে মারামারি মামলা
পঞ্চগড়ে ঐতিহ্যবাহী মহারাজা দ্বীঘির পাড়ে ঘুরতে আসা পর্যটকদের জিম্মী করে অর্থ হাতিয়ে নেওয়া ও বিভিন্ন ধরনের হয়রানি’কে কেন্দ্র করে মারামারির ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় মোঃ শাহজাহান আলী বাদী হয়ে স্থানীয় গ্রাম পুলিশ সহ চার জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। গত (২৬- আগস্ট) দুপুরে জেলা সদরের ঐতিহ্যবাহী মহারাজা দ্বীঘির পাড়ে এই চাঞ্চল্যকর ঘটনা ঘটে। সরেজমিনে পরিদর্শন করে স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, পুকুর পাড়ে ঘুরতে আসা পর্যটকরা প্রায় সময় বিভিন্নভাবে হয়রানির শিকার হয়। শাহজাহান আলীর মত কিছু যুবক ঘুরতে আসা পর্যটকদের বিভিন্নভাবে জিম্মি করে অর্থ আদায় ও হয়রানি করে। গত ২৬ আগস্ট দুপুরে স্থানীয় বাসিন্দা মোঃ আমিরুল ইসলামের ছেলে মোঃ শাহজাহান আলী ও বীর মুক্তিযোদ্ধা জহুরুল হক এর ছোট ছেলে মোঃ সাজু ইসলাম (২২) এর মধ্যে পর্যটকদের সাথে অশালীন আচরণ’কে কেন্দ্র করে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। পরে শাজাহান আলী বাদী হয়ে চারজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। অথচ এখানে মোঃ জাবেদ আলীর কোন দোষ নেই। সে মারামারি বন্ধ করেছে। এ বিষয়ে গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্য ও বীর মুক্তিযোদ্ধা জহুরুল হক এর বড় ছেলে মোঃ জাবেদ আলী বলেন, ঘটনার দিন শাজাহান আলী পুকুরের দক্ষিণ পূর্বকোণায় ঘুরতে আসা পর্যটকদের সাথে খারাপ আচরণ করতেছিল। আমার ছোট ভাই মোঃ সাজু ইসলাম দেখতে পেয়ে প্রতিবাদ করলে তাদের মধ্যে প্রথম দফায় হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। পরে পুকুরের মূল গেইটে আসলে তারা দুজনে পুনরায় হাতাহাতি শুরু করে। এক পর্যায়ে লালচান তাদের মারামারি বন্ধ করতে এগিয়ে আসলে মোঃ শাহজাহান একটা কাঠের টুকরা নিয়ে এসে আমার ছোট ভাইকে কয়েকটা আঘাত করে। পরে আমার ছোট ভাই তার হাত থেকে কাঠের টুকরাটি কেড়ে নেয় এ সময় কাঠের টুকরোতে লেগে থাকা ছোট্ট একটি তারকাটা শাজাহানের মাথায় লেগে একটু কেটে যায়। পরে আমি ঘটনা স্থলে উপস্থিত হয়ে কাঠের টুকরোটি তাদের কাছ থেকে নিয়ে দুজনের পিঠে দুটি বারি দিয়ে ছাড়াছাড়ি করে দিয়ে বাড়ি পাঠিয়ে দেই। এ সময় মোঃ ইলিয়াস আলী (৪৫) ঘটনাস্থলে ছিলই না। তার পরেও তার নামে মামলা দেওয়া হয়েছে। আমাকে প্রধান আসামি করা হয়েছে। সে ইতিপূর্বেও কয়েকবার ঘুরতে আসা পর্যটকদের হয়রানি করে তাদের কাছ থেকে টাকা পয়সা ছিনিয়ে নিয়েছিল। তার বিচার সালিশ পর্যন্ত হয়েছে। শাজাহান আলী বিভিন্ন অপরাধের সাথে সম্পৃক্ত। আমি স্থানীয় গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্য ও যেহেতু পুকুর দেখাশোনা করি তাই মারামারিটা যেন বড় আকার ধারণ না করে তাই আমি ছাড়াছাড়ি করে দিয়েছি। কিন্তু আমার বিরুদ্ধেই তারা মিথ্যা মামলা দিয়েছে। আমি এখানে দায়িত্ব পালন করা কালে অনেকেই বিভিন্ন ধরনের অপকর্ম করতে পারেনা। যে কারণে সুপরিকল্পিতভাবে আমার বিরুদ্ধে একটি মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে। জেলা পরিষদ থেকে মুক্তিযোদ্ধা পরিবার হিসেবে একটি নৌকা আমাদের উপহার দেওয়া হয়েছে। এই নৌকায় চড়ে পর্যটকরা ঘোরে। শাজাহান আলী বলেন, আমি ইলেকট্রিশিয়ান এর কাজ করি। অবসর সময় পুকুর পাড়ে বসে থাকি। ঘটনার দিন মোঃ সাজু এর সাথে কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে হাতাহাতি হয়। আমার মাথায় কে আঘাত করেছে আমি দেখিনি। কোন ধারালো অস্ত্র কারো হাতে দেখতে পাইনি। আমার পূর্বের ঘটনাগুলো এই ঘটনার সাথে একত্রিত না করলেই ভালো হয়। ইতিপূর্বেও পুকুর পাড়ে কয়েকজনের সাথে মারামারি ঘটনা ঘটেছিল বলেও স্বীকার করেন মোঃ শাজাহান আলী। এদিকে এজাহারে উল্লিখিত স্বাক্ষী মোঃ সালাউদ্দিন ও মোঃ সাইম হোসেন জানান, জাবেদ আলীর আঘাতে মাথা ফেটেছে কিনা আমরা দেখি নাই । সেখানে কোন ধারালো ছুরি বা এ ধরনের কিছু কারো হাতে ছিল না। ছোট একটা কাঠের টুকরো আমরা দেখেছি। এ ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এখানকার পরিবেশ ও ভাবমূর্তি নষ্ট করছে। বাইরে থেকে পর্যটকরা আসতে চাচ্ছে না। মোঃ শাজাহান আলী সহ তার মত যারা অযথা পুকুর পাড়ে অবস্থান করে এবং পর্যটকদের সাথে খারাপ আচরণ করে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জোর দাবি জানান স্থানীয় সাধারণ মানুষ।