নওগাঁয় দেয়াল তুলে দোকান ঘর বন্ধ করলেন মার্কেট মালিক
মান্দায় ইটের স্তুপ ও দেয়াল তুলে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে একটি ইলেকট্রনিক্সের প্রতিষ্ঠিত দোকানঘর। এতে দোকানঘরের ভেতরে আটকা পড়েছে ৬ থেকে ৭ লাখ টাকার ইলেকট্রনিক্সের পণ্য। এ ঘটনার প্রতিবাদ করায় তিনতলার ওপর থেকে ব্যবসায়ীদের ওপর ইট-পাটকেল ও মরিচের গুড়া নিক্ষেপ করেন মার্কেট মালিক এসএম আবেদ আলী। মার্কেট মালিকের ছোড়া ইটের আঘাতে শিলন (৩০) নামের এক পথচারি আহত হন। সংবাদ পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। আজ বুধবার (১৩ ডিসেম্বর) বেলা ১২টার দিকে উপজেলা সদর প্রসাদপুর বাজারের এ ঘটনায় স্থানীয় ব্যবসায়ীদের মাঝে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। দোকান মালিক আব্দুস সালাম অভিযোগ করে বলেন, ‘প্রসাদপুর বাজারে কৃষি ব্যাংকের নিচতলায় একটি দোকানঘর আবেদ আলীর কাছ থেকে ভাড়া নিয়ে ২০১৩ সালে ইলেকট্রনিক্স ব্যবসা শুরু করি। এজন্য মার্কেট মালিককে ৩ লাখ টাকা জামানত দিতে হয়েছে। ব্যবসা ভাল না হওয়ায় ২০১৫ সালের শুরুতে দোকানঘরটি ছেড়ে দেওয়ার বিষয়ে মালিককে জানাই। কিন্তু মার্কেট মালিক আমার কথায় কর্ণপাত না করে জামানত ফেরত দিতে টালবাহানা শুরু করে।’ এ-র আগে রনি এন্টারপ্রাইজ প্রাইজ নামে সেখানে আরেক ইলেকট্রনিকস দোকানের ব্যবসায় লালবাতি জ্বালায় সেখান থেকে তার ব্যবসা গুটিয়ে নেন ব্যবসায়ী রায়হানুল ইসলাম রনি ও তার পিতা খলিলুর রহমান। দীর্ঘ ৭/৮ বছর ধরে মামলার পেছনে ছোটাছুটি করতে করতে আমার ব্যবসায় চরম ধ্বস নেমেছে। বিভিন্ন এনজিও ও ব্যাংকে লাখ লাখ টাকা ঋণ বর্তমানে পরিশোধ করতে পারছিনা। এমতাবস্থায় মার্কেট মালিক জোরপূর্বকভাবে প্রভাবখাটিয়ে নতুনভাবে এক মাস ধরে তালাবদ্ধ করে আমার ব্যবসা একেবারে বন্ধ করে দিয়ে়ছে। এ-র ফলে আমার পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করতে বাধ্য হচ্ছি। হতাশায় ও অভাবে আমার অতি দরকারি মোটরসাইকেলটি পর্যন্ত বিক্রি করে দিয়েছি। বর্তমানে মামলার পেছনে ছোটাছুটি ও বিচারের আশায় দ্বারে দ্বারে ঘুরতে হচ্ছে। ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী আবদুস সালাম আরও বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে স্থানীয়ভাবে একাধিকবার বৈঠক করা হলেও তা নিষ্পত্তি হয়নি ওই মার্কেট মালিক মামলাবাজ আবেদ আলীর চরম একগুঁয়ে জেদি স্বভাব ও আচরণের কারণে। এ অবস্থায় ভাড়া না দেওয়ার অভিযোগ এনে মার্কেট মালিক আমাকেসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে মিথ্যা হয়রানি মূলক মামলা করেন। মামলার অপর আসামিরা হলেন, মান্দা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাধারণ সম্পাদক দৈনিক নয়া দিগন্ত ও দৈনিক বার্তার প্রতিনিধি এম এম হারুন আল রশীদ হীরা, তৎকালীন দোকান কর্মচারী রুবেল হোসেন ও সোহেল রানা। এদিকে দীর্ঘ সাত বছর পরে আদালতের সিআর ওই মামলায় আদালত হত্যা চেষ্টা ঘটনার সত্যতা না পেয়ে আমার/ আমাদের পক্ষে দুইবার রায় দিয়েছে। এরপর মার্কেট মালিক আবেদ আলী মামলায় হেরে হাইকোর্টে রিভিউ করেছেন। বর্তমানে মামলাটি বিচারাধীন আছে।’ ভুক্তভোগী আবদুস সালাম অভিযোগ করে বলেন, ‘হঠাৎ করে গত ৯ নভেম্বর গভীররাতে আমার দোকানঘরের সামনে প্রচুর ইট এনে স্তুপ করে দোকানঘর বন্ধ করে দেন মার্কেট মালিক আবেদ আলী। এতে দোকানঘরের ভেতরে অন্তত ৭ লাখ টাকার পণ্য আটকা পড়েছে। উপায়ান্ত না থাকায় বিষয়টি নিরসনের জন্য উপজেলা বণিক সমিতিতে অভিযোগ দিয়েছি।’ উপজেলা বণিক সমবায় সমিতি লিমিটেডের সভাপতি আখতারুজ্জামান আল মনসুর বলেন, এনিয়ে একাধিকবার বৈঠক করা হয়েছে। কিন্তু মার্কেট মালিক আবেদ আলীর একগুয়েমির জন্য সেটি নিষ্পত্তি করা সম্ভব হয়নি। বণিক সমিতির নেতৃবৃন্দ আজ বুধবার বেলা ১২টার দিকে এ বিষয়ে কথা বলতে গেলে মার্কেট মালিক ইট-পাটকেল ও মরিচের গুড় নিক্ষেপ করে। এতে শিলন নামে এক পথচারি আহত হন। তাকে হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি নিরসর না হলে উপজেলা সদরের ব্যবসায়ীরা একজোটবদ্ধ হয়ে কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে মান্দা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোজাম্মেল হক কাজী বলেন, সংবাদ পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। বিষয়টি নিরসনের জন্য ব্যবসায়ী নেতাদের নিয়ে সমঝোতা বৈঠকের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আশা করা যায় এ বিষয়টি আলোচনার মাধ্যমে আপোষ করা সম্ভব হবে।