6:59 am, Saturday, 27 July 2024

প্রশাসনের নাকের ডগায় তৈরী হচ্ছে অবৈধভাবে টায়ার পুড়িয়ে তেল

 অন্তর আহমেদ, নিজস্ব প্রতিবেদক:

বগুড়ার আদমদিঘীর সান্তাহারে বশিপুর এলাকায় হাইওয়ে রাস্তার পাশে টায়ার পুড়িয়ে অবৈধভাবে তৈরি হচ্ছে জ্বালানি তেল। এতে হুমকির মুখে পড়েছে জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশ। নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন স্থানীয়রা। পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়াই বে নামে এই টায়ার পোড়ানো কারখানা পরিবেশ দূষণ, জনদূর্ভোগ ও জনস্বাস্থ্যের হুমকি সৃষ্টি করে আসলেও এখনো কার্যকর কোন ব্যবস্থা নেয়নি প্রশাসন। স্থানীয়দের অভিযোগ, কারখানাটির টায়ার পোড়ার উৎকট গন্ধে রাতে ঘুমানো যায় না। দীর্ঘদিন এ গন্ধ বাধ্য হয়েই নিঃশ্বাসে নিতে হচ্ছে। পানিতে পুরনো বর্জ্য ও বাতাসে কালো ধোঁয়া মেশার ফলে পরিবেশ দূষণ মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। বিবর্ণ আকার ধারণ করেছে সবুজ প্রকৃতি। জনদূর্ভোগ বেড়েছে, বসবাসের অনুপযোগী হয়ে ওঠেছে ওই এলাকাটি। অনুসন্ধানে জানা যায়, কয়েক বছর ধরে নওগাঁ টু বগুড়া মহাসড়কের সান্তাহার (বশিপুর) এলাকায় হাইওয়ে রাস্তার পাশে এক পরিত্যক্ত চাউল কলের চাতালে ফারজানা রিসাইকেলিং নামে টায়ার পোড়ার কারখানা স্থাপন করেন মীজানুর রহমান নামে এক ব্যক্তি। তিনি সংশ্লিষ্ট দপ্তরের অনুমোদন না নিয়েই দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে গাড়ির অব্যহৃত পুরোনো টায়ার এনে দূষণে সহায়ক চুল্লিতে পুড়িয়ে গলানো ট্রায়ার থেকে অপরিশোধিত (ফার্নেস অয়েল) জ্বালানি তেল উৎপাদন করে বিটুমিন পরিবহনের ট্যাঙ্ক গাড়িতে ভর্তি করে ও ড্রামজাত করে বিভিন্ন ঠিকাদারদের কাছে বিক্রি করে। অন্যদিকে টায়ার পুড়িয়ে পাওয়া পাউডার ও লোহার তার যাচ্ছে ছাপাখানায় ও স্টীল রি-রোলিং মিলে।সরেজমিনে শনিবার (২০ জানুয়ারি) গিয়ে দেখা যায় পুরোনা ট্রায়ার ইস্থুপ করে রেখেছে, আরেক দিকে চুল্লিতে টায়ার পুরানো কার্যক্রম চলছে। পুরনোর ছবি সংগ্রহ, ভিডিও ধারণ করার চেষ্টা করলে পত্রিকার প্রতিবেদক অন্তর আহমেদকে বাধা দেন কয়েকজন কর্মরত কর্মী। পরবর্তীতে প্রতিষ্ঠানটির ম্যানেজার ‘ ওয়াসীম ‘ প্রতিবেদক অন্তর আহমেদকে কিছু টাকা দিয়ে মুখ বন্ধ করতে চাইলে প্রতিবেদক টাকা নিতে নানান অযুহাত তুলে ধরেন তিনি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, ‘টায়ার পুরানো এ কারখানাটির ম্যানেজার ওয়াসীম সবাইকে ম্যানেজ করে পরিবেশ বিধ্বংসী এসব কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসছে। দীর্ঘদিন ধরে এলাকাবাসী দুর্ভোগ পোহালেও দেখার যেন কেউ নেই। কারখানারটির মালিক মিজানুর রহমান বলেন, ‘ যাবতীয় আইনী নিয়ম মেনেই আমার কারখানাটি স্থাপন করা হয়েছে, শুধুমাত্র পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র বাঁকি আছে যা অল্পের মধ্যেই পেয়ে যাবো। এদিকে পরিবেশবিদরা বলছেন, টায়ার পোড়ানোর ফলে প্রতিনিয়ত বাতাসে মিশছে কার্বন মনো অক্সাইড, নাইট্রোজেন ও মিথেনসহ ১৬ ধরণের রাসায়নিক ক্ষতিকারক গ্যাস। এসব গ্যাস সৃষ্টির মাধ্যমে বায়ু, পানি, মাটিসহ পরিবেশের সব উপাদান যেমন দূষিত হচ্ছে তেমনি মারাত্মক হুমকিতে পড়ছে জীববৈচিত্র্যও। বন্যপ্রাণিদের আবাসস্থলও ধ্বংস হচ্ছে। মারাত্মক ঝুঁকিতে রয়েছে ওই এলাকার জনস্বাস্থ্য।বগুড়া জেলা ডিপুটি সিভিল সার্জন ডা: সাহানাজ পারভিন বলেন, এই ধরনের কারখানা জনবসতি এলাকা থেকে ফাঁকা জায়গায় কমপক্ষে এক কিলোমিটার দূরত্বে হওয়া উচিত তা না হলে কারখানার দূষিত আবহাওয়ার কারণে আশে, পাশে এলাকার বসবাসরত শিশু, বৃদ্ধ বিভিন্ন বয়সী নারী-পুরুষরা এলার্জি, শ্বাসকষ্ট, নিউমোনিয়া, ফুসফুস ক্যান্সারসহ জটিল শারীরিক রোগে আক্রান্ত হগে পারে। আদমদিঘী উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মোছাঃ রোমানা আফরোজ মুঠোফোনে জানান, ‘টায়ার পুড়িয়ে সড়ক নিম্নমানের আলকাতরা তৈরি করা হয়- আদমদীঘিতে এমনটা হচ্ছে এ বিষয়টি আপনার মাধ্যমে জানতে পারলাম। এটি পরিবেশ বিধ্বংসী কাজ। ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিক যেই-ই হোক পরিবেশ-প্রতিবেশের ক্ষতি করে ব্যবসা করা যাবে না। আমি কারখানাটি পরিদর্শন করব এবং দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা নেব।’ এ বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তর বগুড়া অঞ্চলের সহকারি পরিচালক মাহথীর বিন মোহাম্মদ মুঠোফোনে বলেন, প্রতিষ্ঠানটি ছাড়পত্রের জন্য আবেদন করেছে যা প্রক্রিয়াধীন। এর আগে তাদের জরিমানাও করা হয়েছিল, প্রতিষ্ঠানটির পক্ষে কিছু কাগজপত্র দাখিল করা কথা বলা হয়েছে। তবে ছাড়পত্র পাবার আগে যদি তারা কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে এটি সম্পূর্ণ অবৈধ।তদন্তপূর্বক দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।#

ট্যাগস :

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপডেট সময় : 07:00:47 pm, Saturday, 20 January 2024
63 বার পড়া হয়েছে
error: Content is protected !!

প্রশাসনের নাকের ডগায় তৈরী হচ্ছে অবৈধভাবে টায়ার পুড়িয়ে তেল

আপডেট সময় : 07:00:47 pm, Saturday, 20 January 2024

বগুড়ার আদমদিঘীর সান্তাহারে বশিপুর এলাকায় হাইওয়ে রাস্তার পাশে টায়ার পুড়িয়ে অবৈধভাবে তৈরি হচ্ছে জ্বালানি তেল। এতে হুমকির মুখে পড়েছে জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশ। নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন স্থানীয়রা। পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়াই বে নামে এই টায়ার পোড়ানো কারখানা পরিবেশ দূষণ, জনদূর্ভোগ ও জনস্বাস্থ্যের হুমকি সৃষ্টি করে আসলেও এখনো কার্যকর কোন ব্যবস্থা নেয়নি প্রশাসন। স্থানীয়দের অভিযোগ, কারখানাটির টায়ার পোড়ার উৎকট গন্ধে রাতে ঘুমানো যায় না। দীর্ঘদিন এ গন্ধ বাধ্য হয়েই নিঃশ্বাসে নিতে হচ্ছে। পানিতে পুরনো বর্জ্য ও বাতাসে কালো ধোঁয়া মেশার ফলে পরিবেশ দূষণ মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। বিবর্ণ আকার ধারণ করেছে সবুজ প্রকৃতি। জনদূর্ভোগ বেড়েছে, বসবাসের অনুপযোগী হয়ে ওঠেছে ওই এলাকাটি। অনুসন্ধানে জানা যায়, কয়েক বছর ধরে নওগাঁ টু বগুড়া মহাসড়কের সান্তাহার (বশিপুর) এলাকায় হাইওয়ে রাস্তার পাশে এক পরিত্যক্ত চাউল কলের চাতালে ফারজানা রিসাইকেলিং নামে টায়ার পোড়ার কারখানা স্থাপন করেন মীজানুর রহমান নামে এক ব্যক্তি। তিনি সংশ্লিষ্ট দপ্তরের অনুমোদন না নিয়েই দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে গাড়ির অব্যহৃত পুরোনো টায়ার এনে দূষণে সহায়ক চুল্লিতে পুড়িয়ে গলানো ট্রায়ার থেকে অপরিশোধিত (ফার্নেস অয়েল) জ্বালানি তেল উৎপাদন করে বিটুমিন পরিবহনের ট্যাঙ্ক গাড়িতে ভর্তি করে ও ড্রামজাত করে বিভিন্ন ঠিকাদারদের কাছে বিক্রি করে। অন্যদিকে টায়ার পুড়িয়ে পাওয়া পাউডার ও লোহার তার যাচ্ছে ছাপাখানায় ও স্টীল রি-রোলিং মিলে।সরেজমিনে শনিবার (২০ জানুয়ারি) গিয়ে দেখা যায় পুরোনা ট্রায়ার ইস্থুপ করে রেখেছে, আরেক দিকে চুল্লিতে টায়ার পুরানো কার্যক্রম চলছে। পুরনোর ছবি সংগ্রহ, ভিডিও ধারণ করার চেষ্টা করলে পত্রিকার প্রতিবেদক অন্তর আহমেদকে বাধা দেন কয়েকজন কর্মরত কর্মী। পরবর্তীতে প্রতিষ্ঠানটির ম্যানেজার ‘ ওয়াসীম ‘ প্রতিবেদক অন্তর আহমেদকে কিছু টাকা দিয়ে মুখ বন্ধ করতে চাইলে প্রতিবেদক টাকা নিতে নানান অযুহাত তুলে ধরেন তিনি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, ‘টায়ার পুরানো এ কারখানাটির ম্যানেজার ওয়াসীম সবাইকে ম্যানেজ করে পরিবেশ বিধ্বংসী এসব কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসছে। দীর্ঘদিন ধরে এলাকাবাসী দুর্ভোগ পোহালেও দেখার যেন কেউ নেই। কারখানারটির মালিক মিজানুর রহমান বলেন, ‘ যাবতীয় আইনী নিয়ম মেনেই আমার কারখানাটি স্থাপন করা হয়েছে, শুধুমাত্র পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র বাঁকি আছে যা অল্পের মধ্যেই পেয়ে যাবো। এদিকে পরিবেশবিদরা বলছেন, টায়ার পোড়ানোর ফলে প্রতিনিয়ত বাতাসে মিশছে কার্বন মনো অক্সাইড, নাইট্রোজেন ও মিথেনসহ ১৬ ধরণের রাসায়নিক ক্ষতিকারক গ্যাস। এসব গ্যাস সৃষ্টির মাধ্যমে বায়ু, পানি, মাটিসহ পরিবেশের সব উপাদান যেমন দূষিত হচ্ছে তেমনি মারাত্মক হুমকিতে পড়ছে জীববৈচিত্র্যও। বন্যপ্রাণিদের আবাসস্থলও ধ্বংস হচ্ছে। মারাত্মক ঝুঁকিতে রয়েছে ওই এলাকার জনস্বাস্থ্য।বগুড়া জেলা ডিপুটি সিভিল সার্জন ডা: সাহানাজ পারভিন বলেন, এই ধরনের কারখানা জনবসতি এলাকা থেকে ফাঁকা জায়গায় কমপক্ষে এক কিলোমিটার দূরত্বে হওয়া উচিত তা না হলে কারখানার দূষিত আবহাওয়ার কারণে আশে, পাশে এলাকার বসবাসরত শিশু, বৃদ্ধ বিভিন্ন বয়সী নারী-পুরুষরা এলার্জি, শ্বাসকষ্ট, নিউমোনিয়া, ফুসফুস ক্যান্সারসহ জটিল শারীরিক রোগে আক্রান্ত হগে পারে। আদমদিঘী উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মোছাঃ রোমানা আফরোজ মুঠোফোনে জানান, ‘টায়ার পুড়িয়ে সড়ক নিম্নমানের আলকাতরা তৈরি করা হয়- আদমদীঘিতে এমনটা হচ্ছে এ বিষয়টি আপনার মাধ্যমে জানতে পারলাম। এটি পরিবেশ বিধ্বংসী কাজ। ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিক যেই-ই হোক পরিবেশ-প্রতিবেশের ক্ষতি করে ব্যবসা করা যাবে না। আমি কারখানাটি পরিদর্শন করব এবং দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা নেব।’ এ বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তর বগুড়া অঞ্চলের সহকারি পরিচালক মাহথীর বিন মোহাম্মদ মুঠোফোনে বলেন, প্রতিষ্ঠানটি ছাড়পত্রের জন্য আবেদন করেছে যা প্রক্রিয়াধীন। এর আগে তাদের জরিমানাও করা হয়েছিল, প্রতিষ্ঠানটির পক্ষে কিছু কাগজপত্র দাখিল করা কথা বলা হয়েছে। তবে ছাড়পত্র পাবার আগে যদি তারা কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে এটি সম্পূর্ণ অবৈধ।তদন্তপূর্বক দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।#