5:55 pm, Saturday, 27 April 2024

পঞ্চগড়ের নুর ভারতে কারাবন্দীর পর বাড়িতে ৭ বছর ধরে শিকলে বন্দি

প্রতিনিধির নাম

একেএম বজলুর রহমান, পঞ্চগড় প্রতিনিধি:

পঞ্চগড়ের নুর আলম (৪০)। বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান। বাবার মৃত্যুর পর পরিবারের হাল ধরতে একটা সময় ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের মহানন্দা নদীতে নূড়ি পাথর উত্তোলনের কাজ করতেন। তবে হাসিখুশি সেই ছোট্র সংসারে কালবৈশাখী ঝড়ের মতো নেমে আসে অন্ধকার। পাথর উত্তোলনের মাঝে সীমান্ত অতিক্রম করায় আটক হয় ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) হাতে। এতে ৩ বছরের অধীক সময় ভারতে কারাবন্দী জীবন কাটিয়েছে সে। বন্দী দশা থেকে দেশে ফিরলেও মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে আবারো নিজ বাড়িতে ৭ বছর ধরে শিকল বন্দী জীবন কাটাচ্ছে নুর আলম।

ঘটনাটি ঘটেছে দেশের সর্ব উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলায়। মানসিক ভারসাম্যহীন নুর আলম উপজেলার সর্দারপাড়া গ্রামের মৃত হকিকুল ইসলামের ছেলে।

পারিবারিক ভাবে জানা গেছে, বছর দশেক আগে-ও স্বাভাবিক জীবন ছিল যুবক নুর আলমের (৪০)। সংসার জীবনে হয়েছেন ৩ মেয়ে ও এক ছেলের বাবা। এর মাঝে বিএসএফের হাতে আটকের পর দীর্ঘ ৩ বছরের অধীক সময় পর দেশে ফিরে ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে। এর মাঝে স্থানীয়দের পাশাপাশি পরিবারের সদস্য ও স্ত্রীর উপর হামলা চালালে স্থানীয়দের সহায়তায় তাকে শিকল বন্দী করে রাখা হয়। এতে দীর্ঘ ৭ বছর ধরে শিকল বন্দী জীবন অতিবাহিত করছেন তিনি।

পরিবারের সদস্য ও স্থানীয়রা আরো বলেন, চোখের আড়াল হলেই বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়েন নুর আলম। এর মাঝে কোন কারণ ছাড়াই স্থানীয়দের উপর হামলার করেন সে।

কথা হয় নুর আলমের মা নুর নেহারের সাথে। তিনি বলেন, আমার একমাত্র ছেলে নুর ১০-১২ বছর আগে ভালো ছিল। নদীতে মা-ছেলে একসাথে পাথর উত্তোলনের কাজ করতে গেলে একসময় সে ভারতের ওপাশে ভুল করে চলে যায়। এতে বিএসএফ তাকে আটক করে জেলে পাঠায়। ভারত থেকে বন্দী জীবন শেষে দেশে ফিরেই পাগল হয়ে যায় আমার আদরের ছেলে। এখন তাকে ঘরে শিকল বন্দী অবস্থায় রেখে আমরা নিরুপায় হয়ে মানুষের দারে গিয়ে সাহায্য নিয়ে চলছি। যে বয়সে কাজ করে মাকে খাওয়াবে ছেলে, সে বয়সে ছেলেকে বন্দী রেখে কাজ করে খাওয়াতে হচ্ছে।

কথা হয় নুর আলমের সন্তানদের সাথে। তারা বলেন, যখন থেকে বুঝ হয়েছে তখন থেকে বাবাকে পাগল অবস্থায় দেখছি। খুব কষ্ট হয় বাবার এমন দশা দেখে। অন্যদের মত আমাদেরও ইচ্ছে করে বাবার সাথে একটু ভালো ভাবে থাকতে।

স্থানীয়রা বলছে, উদ্ভট ও খেপামি স্বভাবের কারণেই তাকে শিকল বন্দী রাখা হয়েছে। পরিবারটি সরকারি-বেসরকারি সহায়তা পেলে নুর আলম আবারো সুস্থ্য হয়ে উঠবেন বলে মনে করছেন সকলেই। স্থানীয় প্রতিবেশী বর্ষা আক্তার, লিটন ইসলাম ও উসমান গণি বাংলানিউজকে বলেন, নুর আমার ফুফাতো ভাই হয়। দীর্ঘ ৭ বছর থেকে এমন অবস্থায় খুব কষ্টে আছে পরিবারটি। আয় রোজগারের লোক না থাকায় অনেক সময় অনাহারে দিন অতিবাহিত করে। এর মাঝে আমরা স্থানীয়রা যতটুকু পারি তাদের সহায়তা করি। একই কথা বলেন নারগীস বেগম। তিনি সময় সংবাদকে বলেন, মানুষের খেলা, নাকি আল্লাহর খেলা। আমরা কিছু বুঝতে পারছি না। এমন অবস্থা দেখে খুব খারাপ লাগে। নুরকে শিকল থেকে বের করলে স্থানীয়দের উপর হামলা করে। তাই তাকে বন্দী করে রাখা হয়েছে। টাকার অভাবে পরিবারটি চিকিৎসা করাতে পারে নি। যদি তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয় বা তার চিকিৎসার জন্য কেও তার পরিবারটির পাশে দারায় তাহলে নুর আলম আবারো সুস্থ্য হয়ে উঠবে।

তেঁতুলিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফজলে রাব্বি বলেন, উপজেলা প্রশাসনের মাধ্যমে এর আগেও বিষয়টি অবগত হয়েছি। তার ভারসাম্যহিনতার অবস্থা এতটাই যে এলাকায় নৈরাজ্য শৃষ্টি হতে পারে বলে স্থানীয়রা ও জনপ্রতিনিধীদের সিদ্ধান্তে পরিবারটি তাকে শিকল বন্দী রেখেছে। আমরা উদ্ধতন কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করছি। যতটুকু সম্ভব দারিদ্র পরিবারটির পাশে থেকে চিকিৎসার সহায়তা করা হবে।

ট্যাগস :

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপডেট সময় : 02:15:59 pm, Thursday, 28 March 2024
78 বার পড়া হয়েছে
error: Content is protected !!

পঞ্চগড়ের নুর ভারতে কারাবন্দীর পর বাড়িতে ৭ বছর ধরে শিকলে বন্দি

আপডেট সময় : 02:15:59 pm, Thursday, 28 March 2024

একেএম বজলুর রহমান, পঞ্চগড় প্রতিনিধি:

পঞ্চগড়ের নুর আলম (৪০)। বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান। বাবার মৃত্যুর পর পরিবারের হাল ধরতে একটা সময় ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের মহানন্দা নদীতে নূড়ি পাথর উত্তোলনের কাজ করতেন। তবে হাসিখুশি সেই ছোট্র সংসারে কালবৈশাখী ঝড়ের মতো নেমে আসে অন্ধকার। পাথর উত্তোলনের মাঝে সীমান্ত অতিক্রম করায় আটক হয় ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) হাতে। এতে ৩ বছরের অধীক সময় ভারতে কারাবন্দী জীবন কাটিয়েছে সে। বন্দী দশা থেকে দেশে ফিরলেও মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে আবারো নিজ বাড়িতে ৭ বছর ধরে শিকল বন্দী জীবন কাটাচ্ছে নুর আলম।

ঘটনাটি ঘটেছে দেশের সর্ব উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলায়। মানসিক ভারসাম্যহীন নুর আলম উপজেলার সর্দারপাড়া গ্রামের মৃত হকিকুল ইসলামের ছেলে।

পারিবারিক ভাবে জানা গেছে, বছর দশেক আগে-ও স্বাভাবিক জীবন ছিল যুবক নুর আলমের (৪০)। সংসার জীবনে হয়েছেন ৩ মেয়ে ও এক ছেলের বাবা। এর মাঝে বিএসএফের হাতে আটকের পর দীর্ঘ ৩ বছরের অধীক সময় পর দেশে ফিরে ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে। এর মাঝে স্থানীয়দের পাশাপাশি পরিবারের সদস্য ও স্ত্রীর উপর হামলা চালালে স্থানীয়দের সহায়তায় তাকে শিকল বন্দী করে রাখা হয়। এতে দীর্ঘ ৭ বছর ধরে শিকল বন্দী জীবন অতিবাহিত করছেন তিনি।

পরিবারের সদস্য ও স্থানীয়রা আরো বলেন, চোখের আড়াল হলেই বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়েন নুর আলম। এর মাঝে কোন কারণ ছাড়াই স্থানীয়দের উপর হামলার করেন সে।

কথা হয় নুর আলমের মা নুর নেহারের সাথে। তিনি বলেন, আমার একমাত্র ছেলে নুর ১০-১২ বছর আগে ভালো ছিল। নদীতে মা-ছেলে একসাথে পাথর উত্তোলনের কাজ করতে গেলে একসময় সে ভারতের ওপাশে ভুল করে চলে যায়। এতে বিএসএফ তাকে আটক করে জেলে পাঠায়। ভারত থেকে বন্দী জীবন শেষে দেশে ফিরেই পাগল হয়ে যায় আমার আদরের ছেলে। এখন তাকে ঘরে শিকল বন্দী অবস্থায় রেখে আমরা নিরুপায় হয়ে মানুষের দারে গিয়ে সাহায্য নিয়ে চলছি। যে বয়সে কাজ করে মাকে খাওয়াবে ছেলে, সে বয়সে ছেলেকে বন্দী রেখে কাজ করে খাওয়াতে হচ্ছে।

কথা হয় নুর আলমের সন্তানদের সাথে। তারা বলেন, যখন থেকে বুঝ হয়েছে তখন থেকে বাবাকে পাগল অবস্থায় দেখছি। খুব কষ্ট হয় বাবার এমন দশা দেখে। অন্যদের মত আমাদেরও ইচ্ছে করে বাবার সাথে একটু ভালো ভাবে থাকতে।

স্থানীয়রা বলছে, উদ্ভট ও খেপামি স্বভাবের কারণেই তাকে শিকল বন্দী রাখা হয়েছে। পরিবারটি সরকারি-বেসরকারি সহায়তা পেলে নুর আলম আবারো সুস্থ্য হয়ে উঠবেন বলে মনে করছেন সকলেই। স্থানীয় প্রতিবেশী বর্ষা আক্তার, লিটন ইসলাম ও উসমান গণি বাংলানিউজকে বলেন, নুর আমার ফুফাতো ভাই হয়। দীর্ঘ ৭ বছর থেকে এমন অবস্থায় খুব কষ্টে আছে পরিবারটি। আয় রোজগারের লোক না থাকায় অনেক সময় অনাহারে দিন অতিবাহিত করে। এর মাঝে আমরা স্থানীয়রা যতটুকু পারি তাদের সহায়তা করি। একই কথা বলেন নারগীস বেগম। তিনি সময় সংবাদকে বলেন, মানুষের খেলা, নাকি আল্লাহর খেলা। আমরা কিছু বুঝতে পারছি না। এমন অবস্থা দেখে খুব খারাপ লাগে। নুরকে শিকল থেকে বের করলে স্থানীয়দের উপর হামলা করে। তাই তাকে বন্দী করে রাখা হয়েছে। টাকার অভাবে পরিবারটি চিকিৎসা করাতে পারে নি। যদি তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয় বা তার চিকিৎসার জন্য কেও তার পরিবারটির পাশে দারায় তাহলে নুর আলম আবারো সুস্থ্য হয়ে উঠবে।

তেঁতুলিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফজলে রাব্বি বলেন, উপজেলা প্রশাসনের মাধ্যমে এর আগেও বিষয়টি অবগত হয়েছি। তার ভারসাম্যহিনতার অবস্থা এতটাই যে এলাকায় নৈরাজ্য শৃষ্টি হতে পারে বলে স্থানীয়রা ও জনপ্রতিনিধীদের সিদ্ধান্তে পরিবারটি তাকে শিকল বন্দী রেখেছে। আমরা উদ্ধতন কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করছি। যতটুকু সম্ভব দারিদ্র পরিবারটির পাশে থেকে চিকিৎসার সহায়তা করা হবে।