8:52 am, Saturday, 27 July 2024

পঞ্চগড়ের হাড়িভাষায় দুধ বিক্রির টাকা চাওয়ায় নাতির মারধরে নানার মৃত্যু

প্রতিনিধির নাম

একেএম বজলুর রহমান, পঞ্চগড় প্রতিনিধি

পঞ্চগড়ের সদর উপজেলায় দুধের বাকি টাকা চাইতে গিয়ে নাতি (ভাতিজির ছেলে) ও স্থানীয় বাজারের মাছ বিক্রেতা নাসিরুল ইসলাম (২২) ও তার স্বজন ফজর আলী , রফিকুল ইসলাম , তরিকুল ইসলামদের মারধরে অসুস্থ হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় নানা মজিবর রহমানের (৬৫) মৃত্যু হয়েছে।

গত শুক্রবার (১৯ এপ্রিল) রাতে পঞ্চগড়ের সদর উপজেলার হাড়িভাসা বাজারের মাছহাটিতে এ মারধরের ঘটনা ঘটে। পরে তাকে উদ্ধার করে বাসায় নেয়া হলে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে বৃদ্ধ মজিবরকে প্রথমে স্থানীয় পল্লী চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়া হয় এবং পরে সেখান থেকে পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে নেয়া হয়।

পরে রাতেই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়। এঘটনায় নিহতের বড় ছেলে আলাল উদ্দীন বাদী হয়ে নাসিরুল সহ বেশকয়েকজনকে আসামী করে শনিবার বিকেলে পঞ্চগড় সদর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করছেন বলে জানা গেছে।

এদিকে নিহতের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে বলে জানিয়েছেন পঞ্চগড় সদর থানা পুলিশ।

নিহত বৃদ্ধের বাড়ি উপজেলার হাফিজাবাদ ইউনিয়নের খাংকিপাড়া এলাকায়। তিনি মাছ ধরার পাশাপাশি অন্যর জমিতে দিনমজুরের কাজও করতেন। মারধরকারী নাসিরুল একই এলাকার আলতাফ হোসেনের ছেলে। এদিকে ঘটনার পর থেকেই নাসিরুল ইসলাম, ফজর আলী, তরিকুল ইসলাম, রফিকুল ইসলাম পলাতক রয়েছেন।

পরিবারের স্বজনদের সাথে কথা বলে জানা যায়, গত শুক্রবার (১৯ এপ্রিল) সন্ধ্যার পরে উপজেলার হাড়িভাসা বাজারের মাছহাটিতে নিজ ভাতিজির ছেলে নাতি নাসিরুল ইসলামের কাছে স্ত্রী তনজিনা বেগমকে নিয়ে দুধ বিক্রির ২৫০ টাকা চাইতে যান। এসময় টাকা দিতে অপরাগতা প্রকাশ করেন নাসিরুল হক। এনিয়ে বাকবিতন্ডা শুরু হলে এক পর্যায়ে নাতি নাসিরুল হক মাছ কুটার ডাম্বেল (ডাম্বেল হল কাঠের তৈরী যা দিয়ে মাছ বিক্রেতারা মাছ কুটার সময় ব্যবহার করেন) দিয়ে তার নানার বুকে দুই তিনবার আঘাত করেন। এসময় তিনি মাটিতে পড়ে যান। পরে তাকে বাঁচাতে বৃদ্ধের কয়েকজন স্বজন এগিয়ে এলে তাদেরও বেধরক মারধর করে নাসিরুল সহ তার স্বজনেরা। এসময় তারা ঘটনাস্থলেই বৃদ্ধকে মেরে ফেলার হুমকী দিতে থাকেন। পরে তাকে উদ্ধার বাসায় নেয়া হলে মেয়ে ফুলজান বানুর পানি খেতে চান বৃদ্ধ মজিবর রহমান। মেয়ের হাতে পানি খেয়েই রক্ত বমি শুরু হয় বৃদ্ধ মজিবরের। পরে তাকে স্থানীয় হাড়িভাসা বাজারে পল্লী চিকিৎসকের কাছে নেয়া হলে তাকে পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে নেয়ার পরামর্শ দেয়া হয়। পরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বৃদ্ধ মজিবরের মৃত্যু হয়।

তবে নিহতের স্বজনদের দাবী নাসিরুল মাছ কুটার ডাম্বেল দিয়ে বৃদ্ধ মজিবর রহমানের বুকে আঘাত করায় তার ক্ষত চিহ্ন বুকেই রয়ে গেঠে।

নিহতের বড় মেয়ে ফুলজান বানু বলেন, আমার চাচাতো বোনের ছেলে নাসিরুলের কাছে দুধ বিক্রির ২৫০ টাকা পেতাম। শুক্রবার সন্ধ্যায় সেই পাওনা টাকা চাইতে যান আমার বাবা মা। তবে সে এখনি টাকা না দিয়ে উল্টো তাকে গালিগালাজ শুরু করেন। একপর্যায়ে আমার বাবাকে মাছ কুটার ডাম্বেল দিয়ে বুকে আঘাত করে নাসিরুল। পরে তার সাথে ফজর, তরিকুল, রফিকুলেরা যোগ দেয় আমার বাবাকে বাচাতে এলে তারা আমার ভাতিজা নুরুজ্জামান , চাচাতো ভাই সুজনকেও মারধর করে। পরে বাসায় এসে বাবা আমার কাছে পানি খেতে চান। পানি খেয়েই বাবা বমি শুরু করেন।এসময় গলা দিয়ে রক্তও বের হয়। পরে বাবা অসুস্থ হয়ে পড়লে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় পরে সেখানেই মারা যান। আমি বাবার হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমুলক শাস্তি চাই।

নিহতের ভাতিজা সুজন আলী বলেন, আমি বড় আব্বার সাথেই ছিলাম। তিনি আমার ভাগিনা নাসিরুলের কাছে পাওনা টাকা চাইতে যান। পরে সে মাছ কুটার ডাম্বেল দিয়ে বড় আব্বার বুকে জোড়ে আঘাত করতে থাকে। আমি তাঁকে বাচাঁতে গেলে নাসিরুলেরা আমাকেও মারধর করে। তাদের মারধরেই বড় আব্বার মৃত্যু হয়েছে।

পঞ্চগড় সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার রায় বলেন, নিহতের মরদেহ সুরতহাল করে ময়নাতদন্তের জন্য পঞ্চগড় আধুুনিক সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানোর ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। ময়নাতদন্তের রির্পোট পেলে মৃত্যুর আসল কারণ জানা যাবে। এঘটনায় নিহতের বড় ছেলে নাসিরুল সহ কয়েকজনকে আসামী করে থানায় একটি হত্যা মামলার এজহার দিয়েছেন। মামলা দ্রুতই আমলে নিয়ে আসামীদের ধরতে আমাদের অভিযান শুরু হবে।

ট্যাগস :

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপডেট সময় : 11:08:18 pm, Saturday, 20 April 2024
52 বার পড়া হয়েছে
error: Content is protected !!

পঞ্চগড়ের হাড়িভাষায় দুধ বিক্রির টাকা চাওয়ায় নাতির মারধরে নানার মৃত্যু

আপডেট সময় : 11:08:18 pm, Saturday, 20 April 2024

একেএম বজলুর রহমান, পঞ্চগড় প্রতিনিধি

পঞ্চগড়ের সদর উপজেলায় দুধের বাকি টাকা চাইতে গিয়ে নাতি (ভাতিজির ছেলে) ও স্থানীয় বাজারের মাছ বিক্রেতা নাসিরুল ইসলাম (২২) ও তার স্বজন ফজর আলী , রফিকুল ইসলাম , তরিকুল ইসলামদের মারধরে অসুস্থ হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় নানা মজিবর রহমানের (৬৫) মৃত্যু হয়েছে।

গত শুক্রবার (১৯ এপ্রিল) রাতে পঞ্চগড়ের সদর উপজেলার হাড়িভাসা বাজারের মাছহাটিতে এ মারধরের ঘটনা ঘটে। পরে তাকে উদ্ধার করে বাসায় নেয়া হলে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে বৃদ্ধ মজিবরকে প্রথমে স্থানীয় পল্লী চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়া হয় এবং পরে সেখান থেকে পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে নেয়া হয়।

পরে রাতেই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়। এঘটনায় নিহতের বড় ছেলে আলাল উদ্দীন বাদী হয়ে নাসিরুল সহ বেশকয়েকজনকে আসামী করে শনিবার বিকেলে পঞ্চগড় সদর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করছেন বলে জানা গেছে।

এদিকে নিহতের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে বলে জানিয়েছেন পঞ্চগড় সদর থানা পুলিশ।

নিহত বৃদ্ধের বাড়ি উপজেলার হাফিজাবাদ ইউনিয়নের খাংকিপাড়া এলাকায়। তিনি মাছ ধরার পাশাপাশি অন্যর জমিতে দিনমজুরের কাজও করতেন। মারধরকারী নাসিরুল একই এলাকার আলতাফ হোসেনের ছেলে। এদিকে ঘটনার পর থেকেই নাসিরুল ইসলাম, ফজর আলী, তরিকুল ইসলাম, রফিকুল ইসলাম পলাতক রয়েছেন।

পরিবারের স্বজনদের সাথে কথা বলে জানা যায়, গত শুক্রবার (১৯ এপ্রিল) সন্ধ্যার পরে উপজেলার হাড়িভাসা বাজারের মাছহাটিতে নিজ ভাতিজির ছেলে নাতি নাসিরুল ইসলামের কাছে স্ত্রী তনজিনা বেগমকে নিয়ে দুধ বিক্রির ২৫০ টাকা চাইতে যান। এসময় টাকা দিতে অপরাগতা প্রকাশ করেন নাসিরুল হক। এনিয়ে বাকবিতন্ডা শুরু হলে এক পর্যায়ে নাতি নাসিরুল হক মাছ কুটার ডাম্বেল (ডাম্বেল হল কাঠের তৈরী যা দিয়ে মাছ বিক্রেতারা মাছ কুটার সময় ব্যবহার করেন) দিয়ে তার নানার বুকে দুই তিনবার আঘাত করেন। এসময় তিনি মাটিতে পড়ে যান। পরে তাকে বাঁচাতে বৃদ্ধের কয়েকজন স্বজন এগিয়ে এলে তাদেরও বেধরক মারধর করে নাসিরুল সহ তার স্বজনেরা। এসময় তারা ঘটনাস্থলেই বৃদ্ধকে মেরে ফেলার হুমকী দিতে থাকেন। পরে তাকে উদ্ধার বাসায় নেয়া হলে মেয়ে ফুলজান বানুর পানি খেতে চান বৃদ্ধ মজিবর রহমান। মেয়ের হাতে পানি খেয়েই রক্ত বমি শুরু হয় বৃদ্ধ মজিবরের। পরে তাকে স্থানীয় হাড়িভাসা বাজারে পল্লী চিকিৎসকের কাছে নেয়া হলে তাকে পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে নেয়ার পরামর্শ দেয়া হয়। পরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বৃদ্ধ মজিবরের মৃত্যু হয়।

তবে নিহতের স্বজনদের দাবী নাসিরুল মাছ কুটার ডাম্বেল দিয়ে বৃদ্ধ মজিবর রহমানের বুকে আঘাত করায় তার ক্ষত চিহ্ন বুকেই রয়ে গেঠে।

নিহতের বড় মেয়ে ফুলজান বানু বলেন, আমার চাচাতো বোনের ছেলে নাসিরুলের কাছে দুধ বিক্রির ২৫০ টাকা পেতাম। শুক্রবার সন্ধ্যায় সেই পাওনা টাকা চাইতে যান আমার বাবা মা। তবে সে এখনি টাকা না দিয়ে উল্টো তাকে গালিগালাজ শুরু করেন। একপর্যায়ে আমার বাবাকে মাছ কুটার ডাম্বেল দিয়ে বুকে আঘাত করে নাসিরুল। পরে তার সাথে ফজর, তরিকুল, রফিকুলেরা যোগ দেয় আমার বাবাকে বাচাতে এলে তারা আমার ভাতিজা নুরুজ্জামান , চাচাতো ভাই সুজনকেও মারধর করে। পরে বাসায় এসে বাবা আমার কাছে পানি খেতে চান। পানি খেয়েই বাবা বমি শুরু করেন।এসময় গলা দিয়ে রক্তও বের হয়। পরে বাবা অসুস্থ হয়ে পড়লে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় পরে সেখানেই মারা যান। আমি বাবার হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমুলক শাস্তি চাই।

নিহতের ভাতিজা সুজন আলী বলেন, আমি বড় আব্বার সাথেই ছিলাম। তিনি আমার ভাগিনা নাসিরুলের কাছে পাওনা টাকা চাইতে যান। পরে সে মাছ কুটার ডাম্বেল দিয়ে বড় আব্বার বুকে জোড়ে আঘাত করতে থাকে। আমি তাঁকে বাচাঁতে গেলে নাসিরুলেরা আমাকেও মারধর করে। তাদের মারধরেই বড় আব্বার মৃত্যু হয়েছে।

পঞ্চগড় সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার রায় বলেন, নিহতের মরদেহ সুরতহাল করে ময়নাতদন্তের জন্য পঞ্চগড় আধুুনিক সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানোর ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। ময়নাতদন্তের রির্পোট পেলে মৃত্যুর আসল কারণ জানা যাবে। এঘটনায় নিহতের বড় ছেলে নাসিরুল সহ কয়েকজনকে আসামী করে থানায় একটি হত্যা মামলার এজহার দিয়েছেন। মামলা দ্রুতই আমলে নিয়ে আসামীদের ধরতে আমাদের অভিযান শুরু হবে।