pub-4902861820262150
3:19 am, Sunday, 6 October 2024

পঞ্চগড়ে ক্যান্সারে আক্রান্ত বাবা, পরিবার চালাচ্ছে ১০ বছরের কন্যা শিশু!জেলা প্রশাসকের সহায়তা প্রদান। 

প্রতিনিধির নাম

একেএম বজলুর রহমান, পঞ্চগড় প্রতিনিধি

বাবা-মায়ের বড় সন্তান হওয়ায় বাবার অসুস্থ্যর পর বইয়ের ব্যাগের পরিবর্তে পরিবারের দায়িত্ব এসে পড়েছে তার কাধে। টানা ১৩ ঘন্টা বাবার একমাত্র সম্বলের দোকানটি পরিচালনা করে চালাচ্ছে সকলের ভারণপোষণ। তার এমন ত্যাগ ও এগিয়ে আসায় হতভাগ স্থানীয়রা।

অবুজ দশ বছরের কন্যা শিশু জেমি আক্তার। দারিদ্র পরিবারের মেয়ে হওয়ায় ভাগ্য দেয়নি তার সঙ্গ। ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে অন্য ৮/১০ টি শিশুর থেকে তার জীবন কাটছে অজানা এক বন্দি কারাগারে।

ঘটনাটি পঞ্চগড় পৌরসভার উত্তর জালাসী এলাকার দম্পতি জাহিরুল ইসলাম ও গোলাপী আক্তারের মেয়ে জেমি আক্তারের কথা। দুই বোনের মধ্যে ছোটটি ৪ বছরের হলেও বড় সে।

এ নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হলে পঞ্চগড়ের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জহুরুল ইসলাম রোববার (২১ এপ্রিল) পঞ্চগড় পৌরসভার উত্তর জালাসী এলাকায় ক্যান্সারে আক্রান্ত জাহিরুলের বাড়িতে গিয়ে আর্থিক অনুদান হিসেবে ৫০ হাজার টাকা চেক তুলে দেন তিনি। পরিবারটির পাশে থেকে সব ধরণের সহায়তার আশ্বাস দেন জেলা প্রশাসক। এর আগে তিনি পঞ্চগড় সদর উপজেলা পরিষদ মার্কেটে তাদের দোকানটি পরিদর্শন সহ শিশুর জেমির সাথে কুশল বিনিময় করেন।

জানা গেছে, মোলানি পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৩য় শ্রেণীতে অধ্যায়নরত থাকলেও, গত দেড় বছর ধরে বাবা ক্যান্সারে অসুস্থ্য থাকায় দোকান পরিচালনার মাধ্যমে পরিবারের দায়িত্ব বহন করছে সে। নিয়মিত পঞ্চগড় সদর উপজেলা পরিষদের সামনে বীরমুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল ইসলাম স্টেডিয়ামের পাশে উপজেলা পারিষদের মার্কেটে জেমি ও জুই স্টোর নামে দোকানটি পরিচালনা করছে জেমি।

স্থানীয়রা ও পরিবারটি বলছে, পরিবারটিক একটা সময় হাসি-খুশি থাকলেও হঠাৎ অসুস্থ্য হয়ে পড়ে কর্তা জাহিরুল। এর পর ডাক্তারের পরামর্শে পরীক্ষা-নিরিক্ষা করলে ক্যান্সারের বিষয়টি অবগত হয় সে। এদিকে সুস্থ্যতার জন্য বাড়িতে থাকা গরু-ছাগল বিক্রি করে চিকিৎসা শুরু করে। এর মাঝে ভারতে চিকিৎসা শুরু করলেও টাকার সংকট দেখা দেয়। খাবারসহ টাকার সমস্যার কারণে গত দেড় বছর ধরে বাবার একমাত্র দোকানটি পরিচালনা করছেন শিশু জেমি। এদিকে মাঝে মধ্যে মাকে দোকানে রেখে বিদ্যালয়ে গেলেও দায়িত্বের কারণে অনেক সময় বিদ্যালয়ে যাওয়া সম্ভব হয়না তার। আর এই দোকান দিয়ে যা আয় হচ্ছে তা দিয়ে কোনমতে চিকিৎসাসহ পরিবার চলছে বলে জানা যায়।

প্রতিবেশী দোকানীরা বলেন, যে বয়‌সে বান্ধবীদের সাথে খেলায় সময় কাটানোর কথা, স্কু‌লে যাওয়ার কথা। ঠিক সে বয়সে দীর্ঘ দেড় বছর ধরে নিষ্ঠার সাথে দোকানটি পরিচালনা করছে এই ছোট্র বাচ্চা মেয়েটি। আমরাও তার দোকানের খোঁজখবর রাখছি, যাতে বাচ্চা মেয়েটি কোন সমস্যায় না পড়ে।

এদিকে শিশুটির মা গোলাপী আক্তার বলেন, চিকিৎসার পিছনে সব শেষ হয়ে গেছে আমাদের। এখন এই মেয়েটি ও দোকানটি আমাদের একমাত্র ভরসা। তবে এর মাঝে আমরা খুব মানবেতর অবস্থায় দিন অতিবাহীত করছি। সহায়তার খুবই প্রয়োজন হয়ে পড়েছে আমাদের।

স্থানীয় সমাজ কর্মী শাহজালাল বলেন, বাচ্চা মেয়েটিকে দেখে খুব কষ্ট লাগছে, আমার ছেলের সমবয়সী। সে যে বয়সে দোকান পরিচালনা করে পরিবারটি চালাচ্ছে, সে বয়সে স্কুল ও খেলার মাঠে থাকার কথা তার। সে জানে না ভবিষ্যতে আরো অনেক কষ্ট করতে হবে তাকে। তবে আমি মনে করি এই পরিবারটি পাশে বিত্তবান ও সরকার এগিয়ে আসলে তারা কিছুটা ভালো থাকতে পারবে। তাই তাদের পাশে দারানো অতি জরুরী হয়ে পড়েছে।

ট্যাগস :

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপডেট সময় : 01:19:03 am, Monday, 22 April 2024
99 বার পড়া হয়েছে
error: Content is protected !!

পঞ্চগড়ে ক্যান্সারে আক্রান্ত বাবা, পরিবার চালাচ্ছে ১০ বছরের কন্যা শিশু!জেলা প্রশাসকের সহায়তা প্রদান। 

আপডেট সময় : 01:19:03 am, Monday, 22 April 2024

একেএম বজলুর রহমান, পঞ্চগড় প্রতিনিধি

বাবা-মায়ের বড় সন্তান হওয়ায় বাবার অসুস্থ্যর পর বইয়ের ব্যাগের পরিবর্তে পরিবারের দায়িত্ব এসে পড়েছে তার কাধে। টানা ১৩ ঘন্টা বাবার একমাত্র সম্বলের দোকানটি পরিচালনা করে চালাচ্ছে সকলের ভারণপোষণ। তার এমন ত্যাগ ও এগিয়ে আসায় হতভাগ স্থানীয়রা।

অবুজ দশ বছরের কন্যা শিশু জেমি আক্তার। দারিদ্র পরিবারের মেয়ে হওয়ায় ভাগ্য দেয়নি তার সঙ্গ। ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে অন্য ৮/১০ টি শিশুর থেকে তার জীবন কাটছে অজানা এক বন্দি কারাগারে।

ঘটনাটি পঞ্চগড় পৌরসভার উত্তর জালাসী এলাকার দম্পতি জাহিরুল ইসলাম ও গোলাপী আক্তারের মেয়ে জেমি আক্তারের কথা। দুই বোনের মধ্যে ছোটটি ৪ বছরের হলেও বড় সে।

এ নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হলে পঞ্চগড়ের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জহুরুল ইসলাম রোববার (২১ এপ্রিল) পঞ্চগড় পৌরসভার উত্তর জালাসী এলাকায় ক্যান্সারে আক্রান্ত জাহিরুলের বাড়িতে গিয়ে আর্থিক অনুদান হিসেবে ৫০ হাজার টাকা চেক তুলে দেন তিনি। পরিবারটির পাশে থেকে সব ধরণের সহায়তার আশ্বাস দেন জেলা প্রশাসক। এর আগে তিনি পঞ্চগড় সদর উপজেলা পরিষদ মার্কেটে তাদের দোকানটি পরিদর্শন সহ শিশুর জেমির সাথে কুশল বিনিময় করেন।

জানা গেছে, মোলানি পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৩য় শ্রেণীতে অধ্যায়নরত থাকলেও, গত দেড় বছর ধরে বাবা ক্যান্সারে অসুস্থ্য থাকায় দোকান পরিচালনার মাধ্যমে পরিবারের দায়িত্ব বহন করছে সে। নিয়মিত পঞ্চগড় সদর উপজেলা পরিষদের সামনে বীরমুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল ইসলাম স্টেডিয়ামের পাশে উপজেলা পারিষদের মার্কেটে জেমি ও জুই স্টোর নামে দোকানটি পরিচালনা করছে জেমি।

স্থানীয়রা ও পরিবারটি বলছে, পরিবারটিক একটা সময় হাসি-খুশি থাকলেও হঠাৎ অসুস্থ্য হয়ে পড়ে কর্তা জাহিরুল। এর পর ডাক্তারের পরামর্শে পরীক্ষা-নিরিক্ষা করলে ক্যান্সারের বিষয়টি অবগত হয় সে। এদিকে সুস্থ্যতার জন্য বাড়িতে থাকা গরু-ছাগল বিক্রি করে চিকিৎসা শুরু করে। এর মাঝে ভারতে চিকিৎসা শুরু করলেও টাকার সংকট দেখা দেয়। খাবারসহ টাকার সমস্যার কারণে গত দেড় বছর ধরে বাবার একমাত্র দোকানটি পরিচালনা করছেন শিশু জেমি। এদিকে মাঝে মধ্যে মাকে দোকানে রেখে বিদ্যালয়ে গেলেও দায়িত্বের কারণে অনেক সময় বিদ্যালয়ে যাওয়া সম্ভব হয়না তার। আর এই দোকান দিয়ে যা আয় হচ্ছে তা দিয়ে কোনমতে চিকিৎসাসহ পরিবার চলছে বলে জানা যায়।

প্রতিবেশী দোকানীরা বলেন, যে বয়‌সে বান্ধবীদের সাথে খেলায় সময় কাটানোর কথা, স্কু‌লে যাওয়ার কথা। ঠিক সে বয়সে দীর্ঘ দেড় বছর ধরে নিষ্ঠার সাথে দোকানটি পরিচালনা করছে এই ছোট্র বাচ্চা মেয়েটি। আমরাও তার দোকানের খোঁজখবর রাখছি, যাতে বাচ্চা মেয়েটি কোন সমস্যায় না পড়ে।

এদিকে শিশুটির মা গোলাপী আক্তার বলেন, চিকিৎসার পিছনে সব শেষ হয়ে গেছে আমাদের। এখন এই মেয়েটি ও দোকানটি আমাদের একমাত্র ভরসা। তবে এর মাঝে আমরা খুব মানবেতর অবস্থায় দিন অতিবাহীত করছি। সহায়তার খুবই প্রয়োজন হয়ে পড়েছে আমাদের।

স্থানীয় সমাজ কর্মী শাহজালাল বলেন, বাচ্চা মেয়েটিকে দেখে খুব কষ্ট লাগছে, আমার ছেলের সমবয়সী। সে যে বয়সে দোকান পরিচালনা করে পরিবারটি চালাচ্ছে, সে বয়সে স্কুল ও খেলার মাঠে থাকার কথা তার। সে জানে না ভবিষ্যতে আরো অনেক কষ্ট করতে হবে তাকে। তবে আমি মনে করি এই পরিবারটি পাশে বিত্তবান ও সরকার এগিয়ে আসলে তারা কিছুটা ভালো থাকতে পারবে। তাই তাদের পাশে দারানো অতি জরুরী হয়ে পড়েছে।