4:04 am, Friday, 20 September 2024

পঞ্চগড়ে পাচারের সময় রাতের অন্ধকার ২০ লাখ টাকার চা জব্দ

প্রতিনিধির নাম

একেএম বজলুর রহমান, পঞ্চগড় প্রতিনিধি :

পঞ্চগড়ে রাতের অন্ধকারে পাচারের সময়  কাভার্টভ্যানে প্রক্রিয়াজাতকরণ বস্তাভর্তি চায়ের পাতা কাভার্ড ভ্যান সহ আটক করা হয়েছে।  ১২ হাজার ৫শ কেজি ওজনের চা আটক করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কাস্টমস কর্মকর্তারা। রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে কালোবাজারে পাচার করা হচ্ছিল চায়ের পাতা গুলো। তবে বিষয়টি অধিকতর তদন্তে চা সহ গাড়িটি জব্দ করে থানা পুলিশের হেফাজতে দেয়া হয়েছে।  রোববার (১৪ জুলাই) রাতে পঞ্চগড়ের সদর উপজেলার অমরখানা ইউনিয়নের বোডঅফিস বাজার এলাকায় মহাসড়কে কাভার্টভ্যানটিকে আটক করা হয়। জানা গেছে, রাতে রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে পাচারের উদ্দেশ্যে তেঁতুলিয়া উপজেলার কোন এক চা বাগানের কারখানা থেকে জাতীয় মহাসড়ক ধরে অজানা গন্তব্যে যাচ্ছিল।  হিনো ট্রেডার্স নামে একটি কাভার্টভ্যানে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল এসব চা পাতা। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বোডঅফিস বাজার এলাকায় মহাসড়কে কাভার্টভ্যানটির গতিরোধ করে অভিযান চালায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কর্মকর্তারা। এসময় প্রায় ২০ লাখ টাকার ১২ হাজার ৫শ কেজির ২৫০ বস্তা চা আটক করা হয়।  জানা যায়, চাগুলো তেঁতুলিয়ার মাঝিপাড়া এলাকার সুরমা অ্যান্ড পূর্ণিমা চা কারখানার তৈরিকৃত চা। রাতেই খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে জমায়েত হয় স্থানীয়রা। এদিকে বিষয়টি যাচাই করতে গিয়ে প্রায় ৩ ঘন্টার অধিক সময় নেয়ায় নানা অভিযোগ উঠে কাস্টমস কর্তকর্তাদের বিরুদ্ধে। কালক্ষেপণ করার অভিযোগ তুলে কর্মকর্তাদের সাথে কিছুটা তর্কে জড়িয়ে পড়েন স্থানীয়রা।  এর আগেও একাধিকবার সুরমা অ্যান্ড পূর্ণিমা চা কারখানার চা জব্দ করেছে কাস্টমস সহ চা বোর্ড। সর্বশেষ গত ২৯ মে ৪৯৭ কেজি বাস্তা ভর্তি চা কালোবাজারে বিক্রি করতে গিয়ে ধরা পরে। ১১ জুলাই চা বোর্ডের চেয়ারম্যান শুনানী করলে কারখানাটির মালিক ক্ষমা প্রর্থনা করে মুচলেকা দেয়ায় মালিক শেখ ফরিদকে জরিমানায় ছেড়ে দেয়া হয়।  এসময় স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন, কারখানা মালিকরা এভাবে রাতের আধারে ভালো মানের চাগুলো কালোবাজারে পাচার করে দেয়। এতে যেমন সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে, একই সাথে এর কারণে তারা খারাপ চা অকশনে তুলে লোকসান দেখিয়ে সিন্ডিকেট করছে। এ বিষয়ে ধড়াপড়া এই কারখানা গুলোর বিরুদ্ধে শুধু জরিমানা না, কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করে তাদের অনুমোদন বাতিল করা জরুরী হয়ে পড়েছে।  স্থানীয় মোকলেছুর রহমান বলেন, এই কারখানা এর আগেও কালোবাজারি করতে গিয়ে ধরা পড়েছে। তাদের এই কালোবাজারীর কারণে শুধু আমাদের চা চাষীরাই নয় সরকারও রাজস্ব হারিয়ে ক্ষতির মুখে পড়ছে। আমরা জানি কাস্টমস এর ছাড়পত্র ছাড়া কোন গাড়ি যেতে পারবে না। কিন্তু দিনের পর দিন তারা এই কাজ করে যাচ্ছে। তাই মনে করছি কাস্টমসের দুর্বলতা রয়েছে। তারা অসাদু উপায় অবলম্বন করে তাদের ছেড়ে দিচ্ছে। অমরখানা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুজ্জামান নুরু বলেন, আজকে এ সকল চা কারখানার জন্য আমাদের চাষিদের অবস্থা খুব নাজুক। সরকারি টেক্স ফাকি দিয়ে মালগুলো যাচ্ছে, অবশ্যই উদ্ধতন কর্তৃপক্ষ জানে বলে আমি বুঝি। না হলে রাস্তাঘাটে কাস্টমস টোল তুলছে কেন? তারা গাড়ি আটক করে থানা বা অফিসে নিয়ে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা নিবে, যেহেতু তাদের ছাড়পত্র ছাড়া বের হয়েছে। কিন্তু তা না করে কাস্টমস ঘন্টার পর ঘন্টা রাস্তায় গাড়ি আটক করে কি করে। আমরা এমন অপরাধে জড়িত থাকা কারখানার বিরুদ্ধে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের জোর দাবি জানাচ্ছি। পঞ্চগড় জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি নোমান হাসান বলেন, চা প্রক্রিয়াজাত শেষে কাস্টমস ছাড়পত্র দিলে সিলগালা হয়ে গাড়ি তার পর যাবে। কিন্তু এখানে এটার বিপরীত দেখছি। কাস্টমস ক্লিয়ারেন্স দিলে তারা এই অভিযান পরিচালনা করতো না। অতএব এই গাড়িটি কালোবাজারে যাচ্ছিল তা প্রমাণিত। এদিকে জাতীয় রাজস্ব বোড কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশন পঞ্চগড়ের সহকারি রাজস্ব কর্মকর্তা ইবনে রাসেল বলেন, কালোবাজারে চা পাচারের গোপন সংবাদের ভিত্তিতে কাভার্ট ভ্যানটি আটক করা হয়েছে। এসময় প্রয়োজনীয় নথিতে কিছুটা অসামঞ্জস্য থাকায় সন্দেহমূলক ভাবে চা সহ কাভার্টভ্যানটি জব্দ করে পুলিশি হেফাযতে দেয়া হয়েছে। পরবর্তীতে যাচাই বাছাই শেষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে।  বাংলাদেশ চা বোর্ড আঞ্চলিক কার্যালয় পঞ্চগড়ের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আমির হোসেন বলেন, গত কয়েক মাস আগেও এই চা কারখানার অবৈধ চা আটক করা হয়। গত ১১ জুলাই চা বোর্ড চেয়ারম্যান নিজেই তার অপরাধের শুনানী করেছেন। এসময় কারখানার মালিক শেষ বারের মত ক্ষমা চেয়ে মুচলেকা দেন। তাই তাকে সতর্ক করতে চেয়ারম্যান মহদয় শুধু জরিমানা করেন। তবে আবারো একই অপরাধের অভিযোগে কারখানাটির মাল আটক হয়েছে। কাস্টমস ক্লিয়ারেন্স দিলে এই কারখানার বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তবে আমরা ধারণা করছি এটা কালোবাজারে যাচ্ছিলো। এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু না বললেও জব্দকৃত চা নিয়ে প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট রয়েছে বলে জানান কারখানাটির মালিক শেখ ফরিদ

ট্যাগস :

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপডেট সময় : 07:14:08 pm, Monday, 15 July 2024
80 বার পড়া হয়েছে
error: Content is protected !!

পঞ্চগড়ে পাচারের সময় রাতের অন্ধকার ২০ লাখ টাকার চা জব্দ

আপডেট সময় : 07:14:08 pm, Monday, 15 July 2024

একেএম বজলুর রহমান, পঞ্চগড় প্রতিনিধি :

পঞ্চগড়ে রাতের অন্ধকারে পাচারের সময়  কাভার্টভ্যানে প্রক্রিয়াজাতকরণ বস্তাভর্তি চায়ের পাতা কাভার্ড ভ্যান সহ আটক করা হয়েছে।  ১২ হাজার ৫শ কেজি ওজনের চা আটক করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কাস্টমস কর্মকর্তারা। রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে কালোবাজারে পাচার করা হচ্ছিল চায়ের পাতা গুলো। তবে বিষয়টি অধিকতর তদন্তে চা সহ গাড়িটি জব্দ করে থানা পুলিশের হেফাজতে দেয়া হয়েছে।  রোববার (১৪ জুলাই) রাতে পঞ্চগড়ের সদর উপজেলার অমরখানা ইউনিয়নের বোডঅফিস বাজার এলাকায় মহাসড়কে কাভার্টভ্যানটিকে আটক করা হয়। জানা গেছে, রাতে রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে পাচারের উদ্দেশ্যে তেঁতুলিয়া উপজেলার কোন এক চা বাগানের কারখানা থেকে জাতীয় মহাসড়ক ধরে অজানা গন্তব্যে যাচ্ছিল।  হিনো ট্রেডার্স নামে একটি কাভার্টভ্যানে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল এসব চা পাতা। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বোডঅফিস বাজার এলাকায় মহাসড়কে কাভার্টভ্যানটির গতিরোধ করে অভিযান চালায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কর্মকর্তারা। এসময় প্রায় ২০ লাখ টাকার ১২ হাজার ৫শ কেজির ২৫০ বস্তা চা আটক করা হয়।  জানা যায়, চাগুলো তেঁতুলিয়ার মাঝিপাড়া এলাকার সুরমা অ্যান্ড পূর্ণিমা চা কারখানার তৈরিকৃত চা। রাতেই খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে জমায়েত হয় স্থানীয়রা। এদিকে বিষয়টি যাচাই করতে গিয়ে প্রায় ৩ ঘন্টার অধিক সময় নেয়ায় নানা অভিযোগ উঠে কাস্টমস কর্তকর্তাদের বিরুদ্ধে। কালক্ষেপণ করার অভিযোগ তুলে কর্মকর্তাদের সাথে কিছুটা তর্কে জড়িয়ে পড়েন স্থানীয়রা।  এর আগেও একাধিকবার সুরমা অ্যান্ড পূর্ণিমা চা কারখানার চা জব্দ করেছে কাস্টমস সহ চা বোর্ড। সর্বশেষ গত ২৯ মে ৪৯৭ কেজি বাস্তা ভর্তি চা কালোবাজারে বিক্রি করতে গিয়ে ধরা পরে। ১১ জুলাই চা বোর্ডের চেয়ারম্যান শুনানী করলে কারখানাটির মালিক ক্ষমা প্রর্থনা করে মুচলেকা দেয়ায় মালিক শেখ ফরিদকে জরিমানায় ছেড়ে দেয়া হয়।  এসময় স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন, কারখানা মালিকরা এভাবে রাতের আধারে ভালো মানের চাগুলো কালোবাজারে পাচার করে দেয়। এতে যেমন সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে, একই সাথে এর কারণে তারা খারাপ চা অকশনে তুলে লোকসান দেখিয়ে সিন্ডিকেট করছে। এ বিষয়ে ধড়াপড়া এই কারখানা গুলোর বিরুদ্ধে শুধু জরিমানা না, কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করে তাদের অনুমোদন বাতিল করা জরুরী হয়ে পড়েছে।  স্থানীয় মোকলেছুর রহমান বলেন, এই কারখানা এর আগেও কালোবাজারি করতে গিয়ে ধরা পড়েছে। তাদের এই কালোবাজারীর কারণে শুধু আমাদের চা চাষীরাই নয় সরকারও রাজস্ব হারিয়ে ক্ষতির মুখে পড়ছে। আমরা জানি কাস্টমস এর ছাড়পত্র ছাড়া কোন গাড়ি যেতে পারবে না। কিন্তু দিনের পর দিন তারা এই কাজ করে যাচ্ছে। তাই মনে করছি কাস্টমসের দুর্বলতা রয়েছে। তারা অসাদু উপায় অবলম্বন করে তাদের ছেড়ে দিচ্ছে। অমরখানা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুজ্জামান নুরু বলেন, আজকে এ সকল চা কারখানার জন্য আমাদের চাষিদের অবস্থা খুব নাজুক। সরকারি টেক্স ফাকি দিয়ে মালগুলো যাচ্ছে, অবশ্যই উদ্ধতন কর্তৃপক্ষ জানে বলে আমি বুঝি। না হলে রাস্তাঘাটে কাস্টমস টোল তুলছে কেন? তারা গাড়ি আটক করে থানা বা অফিসে নিয়ে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা নিবে, যেহেতু তাদের ছাড়পত্র ছাড়া বের হয়েছে। কিন্তু তা না করে কাস্টমস ঘন্টার পর ঘন্টা রাস্তায় গাড়ি আটক করে কি করে। আমরা এমন অপরাধে জড়িত থাকা কারখানার বিরুদ্ধে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের জোর দাবি জানাচ্ছি। পঞ্চগড় জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি নোমান হাসান বলেন, চা প্রক্রিয়াজাত শেষে কাস্টমস ছাড়পত্র দিলে সিলগালা হয়ে গাড়ি তার পর যাবে। কিন্তু এখানে এটার বিপরীত দেখছি। কাস্টমস ক্লিয়ারেন্স দিলে তারা এই অভিযান পরিচালনা করতো না। অতএব এই গাড়িটি কালোবাজারে যাচ্ছিল তা প্রমাণিত। এদিকে জাতীয় রাজস্ব বোড কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশন পঞ্চগড়ের সহকারি রাজস্ব কর্মকর্তা ইবনে রাসেল বলেন, কালোবাজারে চা পাচারের গোপন সংবাদের ভিত্তিতে কাভার্ট ভ্যানটি আটক করা হয়েছে। এসময় প্রয়োজনীয় নথিতে কিছুটা অসামঞ্জস্য থাকায় সন্দেহমূলক ভাবে চা সহ কাভার্টভ্যানটি জব্দ করে পুলিশি হেফাযতে দেয়া হয়েছে। পরবর্তীতে যাচাই বাছাই শেষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে।  বাংলাদেশ চা বোর্ড আঞ্চলিক কার্যালয় পঞ্চগড়ের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আমির হোসেন বলেন, গত কয়েক মাস আগেও এই চা কারখানার অবৈধ চা আটক করা হয়। গত ১১ জুলাই চা বোর্ড চেয়ারম্যান নিজেই তার অপরাধের শুনানী করেছেন। এসময় কারখানার মালিক শেষ বারের মত ক্ষমা চেয়ে মুচলেকা দেন। তাই তাকে সতর্ক করতে চেয়ারম্যান মহদয় শুধু জরিমানা করেন। তবে আবারো একই অপরাধের অভিযোগে কারখানাটির মাল আটক হয়েছে। কাস্টমস ক্লিয়ারেন্স দিলে এই কারখানার বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তবে আমরা ধারণা করছি এটা কালোবাজারে যাচ্ছিলো। এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু না বললেও জব্দকৃত চা নিয়ে প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট রয়েছে বলে জানান কারখানাটির মালিক শেখ ফরিদ